ফিশিং ইমেইল সহজে চেনার উপায়: মানুষ যত বেশি ইন্টারনেট এর উপর নির্ভরশীল হচ্ছে স্ক্যামার ও হ্যাকারা নানা কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য বা ব্যাংক এর তথ্য চুরি করতে। নতুন ও অনভিজ্ঞ ইন্টারনেট ইউজাররা বিভিন্ন ধরনের অনলাইন স্ক্যাম ও হ্যাকের শিকার হয়।
প্রতিনিয়ত হ্যাকারা নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে ফিশিং ইমেইল। ইমেইল স্ক্যাম এইটাই কার্যকারী যে অনেক সময় অনভিজ্ঞ ইন্টারনেট ইউজারদের পাশাপাশি অনেক অভিজ্ঞ ইন্টারনেট ইউজাররাও এর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং তা বুঝতেও পারে না। তাই সবার জন্য ফিশিং ইমেইল সম্পর্কে জানা ও কিভাবে এটা চিনবেন তা জানা অতি জরুরী। এই পোস্টে ফিশিং ইমেইল সম্পর্কে জানবো এবং কিভাবে ফিশিং ইমেইল চিনবেন সেই সম্পর্কে জানবো।
ফিশিং ইমেইল কি?
ফিশিং ইমেইল হচ্ছে হ্যাকারদের দ্বারা পাঠানো এক জাতীয় ইমেইল যা আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বা অ্যাকাউন্ট ডেটা সরবরাহ করতে বাধ্য করে৷ এই ইমেইল দেখে লেজিট একটি ইমেইল মনে হয়। হ্যাকারা ইমেইল গুলো এমন ভাবে সাজায় যে প্রথম দেখায় বেশিরভাগ লোকই এটাকে লেজিট ইমেইল হিসাবে মনে করে এবং তাদের তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রেরণ করে।
ফিশিং ইমেইল সাধারণত একটি লিংক এড থাকে যেখানে গিয়ে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য দিতে হয়। যদি আপনি ফিশিং ইমেইল চিনতে না পারেন এবং আপনার তথ্য গুলো দিয়ে দেন এতে আপনার সোস্যাল মিডিয়ার একাউন্ট বা ব্যাংক একাউন্ট ইত্যাদি হ্যাকের শিকার হতে পারে।
কিভাবে ফিশিং ইমেইল চিনবেন?
যদিও ফিশিং ইমেইল গুলো একেবারে লেজিট ইমেইল মতো দেখায় তাইও একটু চোখ কান খোলা রেখে খেয়াল করলে ফিশিং ইমেইল চিনে সম্ভব। নিচে ফিশিং ইমেইল চেনার কিছু উপায় বলা হলো।
ভাষা ও বানানের দিকে লক্ষ করুন
ফিশিং ইমেইল এই জাতীয় ভুল থাকে, যদিও বর্তমানে হ্যাকারাও আরো আপডেট হয়ে গেছে তাই ভাষা ও বানানের দিকে নজর দেয়। তবুও লক্ষ করলে ভাষা ও বানানের পরিবর্তন দেখতে পাবেন। লেজিড কম্পানি গুলো ভাষা ও বানান স্পষ্ট ও আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন তারা কি বলতে চাইছে। অন্য দিকে হ্যাকার ভাষায় গড় মিল থাকবে এবং আপনি সহজেই প্রলভিত হবে এমন ভাবে লেখা থাকবে। এছাড়াও কোনো বিষয় সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকবে না।
ইমেইল address এর দিকে লক্ষ রাখুন
হ্যাকার বা স্ক্যামাররা সব সময় বড় বড় কম্পানির নাম দিয়েই আপনাকে ইমেইল পাঠাবে। তবে বেশিরভাগ সময় তাদের ব্যবহারিত ইমেইল এড্রেস গুলো ওইসকল কম্পানি ইমেইল এড্রেস এর মতো হয়ে থাকে। যেহেতু একটা ইমেইল এড্রেস একটা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারে সে জন্য তারা ইমেইল এড্রেস গুলো প্রায় ওই প্রতিষ্ঠানের ইমেইল এর কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করে।
এছাড়াও লেজিড কম্পানি গুলো তাদের ইমেইল এ তাদের ডোমেইন নাম ব্যবহার করে থাকে যেমন, ধরুন মাইক্রোসফট থেকে আপনাকে ইমেইল পাঠানো হলো সেক্ষেত্রে support@microsoft.com এই রকম এড্রেস থেকে ইমেইল আসবে। আর যদি microsoft-support@gmail.com এই ধরণের এড্রেস থেকে আপনাকে ইমেইল পাঠানো হয় তাহলে বুঝে নিবে এইটা কোন লেজিট কম্পানির ইমেইল নয়।
ব্যক্তিগত তথ্য চাইবে না
লেজিট কম্পানি থেকে ইমেইল এর মাধ্যমে সরাসরি আপনার কাছে আপনার ব্যাংক একাউন্ট এর বিস্তারিত ও পাসওয়ার্ড বা আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় username, password, user-email চাইবে না। যদি অনেক ক্ষেত্রে গুগল বা ফেসবুক ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম্বার, ঠিকানা বা ভোটার আইডি কার্ড এর ছবি চায় সেক্ষেত্রে লেজিট কম্পানি গুলো তা সুন্দর ভাবে উল্লেখ করে এবং তারা কখনো আপনার ব্যাংক একাউন্ট বা কোন একাউন্ট এর username, password, user-email চাইবে না।
ওয়েবসাইট লিংক
লেজিট প্রতিষ্ঠান তাদের ইমেইল এ third party কোন ওয়েবসাইট বা এমন কোনো ওয়েবসাইটে লিংক শেয়ার করবে না যেগুলো অপরিচিত। প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল গুলোতে সর্বদা ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করে থাকে। মনে করুন আপনার ব্যাংক থেকে আপনাকে একটা ইমেইল পাঠানো হয়েছে সেখানে কখনো www.scamer420.xyz এমন কোনো তৃতীয় পক্ষ ওয়েবসাইটে লিংক শেয়ার করবে না।
বৈধ কোম্পানিগুলি সাধারণত আপনাকে আপনার নাম ধরে ডাকে
বৈধ কোম্পানিগুলি ইমেইল এ আপনার নাম বা username উল্লেখ করে আপনাকে ডাকবে। যেমন Hello username, Dear username এই ভাবে ডেকে থাকবে। কিন্তু হ্যাকারা Dear Sir, Dear Customer, Dear valued member এই ভাবে আপনাকে ডেকে থাকবে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে লেজিট কম্পানি গুলো ও ওই জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে থাকে। তাই নাম দেখে ফিশিং ইমেইল বিবেচনা করার আগে উপরের বিষয়গুলো দেখে নিতে হবে।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ফিশিং ইমেইল সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছে এবং ফিশিং ইমেইল চেনার উপায় সম্পর্কে জেনেছেন। আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের ফিশিং ইমেইল থেকে বাঁচতে সহায়তা করবে।